পৃথিবীর কাল্পনিক রেখা সমূহ
পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষরেখা বলে। এ অক্ষরেখার উত্তর-প্রান্ত বিন্দুকে উত্তর মেরু বা সুমেরু এবং দক্ষিণ-প্রান্ত বিন্দুকে দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু বলে। দুই মেরু থেকে সমান দূরত্ব পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে বলা হয় নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা। পৃথিবীর গোলীয় আকৃতির জন্য এ রেখা বৃত্তাকার, তাই এ রেখাকে নিরক্ষবৃত্তও বলা হয়। নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে দক্ষিণ গোলার্ধ বলা হয়। নিরক্ষরেখার সাহায্যে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্ব স্থির করা হয়; নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। নিরক্ষরেখা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দুরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়।অক্ষাংশের ভিন্নতা ও পরিবর্তনের সাথে সাথেই জলবায়ুরও তারতম্য ঘটে। সূর্য কিরণ সারা বছর লম্ব ভাবে পরার কারণে নিরক্ষিয় অঞ্চলে উষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে ।এবং মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্য রশ্মি ক্রমশ তির্যক হতে থাকে এবং জলবায়ু শিতল হয়। ফলে নিরক্ষিয় অঞ্চলে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। নিরক্ষরেখা বরাবর স্থানসমূহে সূর্যরশ্মি খাড়াভাবে পড়ে বিধায় ঐসকল অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে থাকে। ১ °সে অক্ষাংশে উষ্ণতা 0.২৮ °সে হ্রাস পায় বলেই নিরক্ষরেখা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তি উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে বরফ রয়েছে।নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ ০° জ্যামিতির কোণের ন্যায় ।অক্ষাংশের পরিমাপের একককে ডিগ্রী বলে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার অক্ষাংশ ২৩°৪২′০″ উত্তর।
দ্রাঘিমা রেখা
ছেদ রেখা
নিরক্ষরেখা
মধ্যরেখা
বিষুব রেখা
পৃথিবীর নিরক্ষরেখা দিয়ে গমনকারী কল্পিত সমতলটির সূর্যের কেন্দ্রকে অতিক্রমকালীন মুহূর্তের জ্যোতি:বিষয়ক ঘটনাটিকে সাধারণভাবে বিষুব বলা হয়।[১] অর্থাৎ বিষুব হল নিরক্ষরেখা উপরে সূর্যের উলম্ব অবস্থান তথা নিরক্ষরেখায় সৌরপাদ বিন্দুর আগমনই। অন্যকথায় বলা যায়, নিরক্ষরেখায় অবস্থানকারী কোন ব্যক্তি যে মুহূর্তে ঠিক তার মাথার উপরে সূর্যকে দেখবেন সে মুহূর্তটিই বিষুব।[২] প্রতি বছর সূর্যের একবারকরে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন ঘটায় সূর্য প্রতি বছরে দুবার নিরক্ষরেখাকে অতিক্রম করে। ফলে প্রতিবছর দুটি বিষুব ঘটে। যথা:—
মার্চ মাসে মহাবিষুব এবং
সেপ্টেম্বর মাসে জলবিষুব
বিষুব শব্দটি ইংরেজি Equinox এর পারিভাষিক শব্দ। Equinox শব্দটি ল্যাটিন aequinoctium ( aequus + nox) থেকে এসেছে। ল্যাটিনে aequus অর্থ সমান এবং nox অর্থ রাত। ব্যুৎপত্তিগতভাবে equinox অর্থ সমান রাত অর্থাৎ এদিন পৃথিবীতে দিন-রাত সমান। বাস্তবে সূর্যের কৌণিক আকার ও বায়ুমণ্ডলে আলোর প্রতিসরণের কারণে দিন-রাত একেবারে সমান সমান না হয়ে ১২ ঘণ্টার খুব কাছাকাছি হয় মাত্র।
উত্তর গোলার্ধে মহাবিষুবকে বসন্ত বিষুব এবং জলবিষুবকে শারদীয় বিষুব বলা হয়। বিপরীতক্রমে দক্ষিণ গোলার্ধে মহাবিষুবকে শারদীয় ও জলবিষুবকে বসন্ত বিষুব বলা হয়। আবার উত্তরায়ণের সময় মহাবিষুব ঘটে বলে একে উত্তরাভিমুখী বিষুব এবং একইভাবে জলবিষুবকে দক্ষিণাভিমুখী বিষুবও বলা হয়। পঞ্জিকা বছর ও সৌর বছরের মধ্যে পার্থক্যের ফলে বিষুব দুটি কোন নির্দিষ্ট তারিখে ঘটে না। মহাবিষুব মার্চ মাসের ১৯ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে যে কোন দিন এবং জলবিষুব সেপ্টেম্বর মাসের ২১ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে যেকোন দিন ঘটতে পারে।
অক্ষরেখা
অক্ষ রেখা, বা, অক্ষ বৃত্ত হচ্ছে পৃথিবীর পূর্ব–পশ্চিমকে পূর্ণভাবে আবৃত করে রাখা বিমূর্ত কতগুলো বৃত্তরেখা যা একই অক্ষাংশের সকল স্থানকে (উচ্চতা উপেক্ষা করে) সংযুক্ত করে।
অক্ষ বৃত্তগুলিকে প্রায়শই সমান্তরাল বৃক্ত বলা হয় কারণ তারা একে অপরের সমান্তরাল; অর্থাৎ, কোনো সমতলে তাদের স্থাপন করা হলে এরা কখনোই একে অপরকে ছেদ করে না। কোনো অক্ষ বৃত্তস্থ একটি স্থানের অবস্থান তার দ্রাঘিমাংশ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অক্ষ রেখাগুলি দ্রাঘিমা রেখার মতো নয়; এরা নিরক্ষীয় অঞ্চল হতে দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির হতে থাকে। তাদের দৈর্ঘ্য একটি সাধারণ সাইন বা কোসাইন অপেক্ষক দ্বারা পরিগণনা করা হয়। উত্তর বা দক্ষিণের ৬০তম সমান্তরাল রেখাটি লম্বায় নিরক্ষরেখার অর্ধেক (পৃথিবীর বক্রতাকে সমতলে রূপান্তরের ০.৩% উপেক্ষা করা হয়েছে)। একটি অক্ষ বৃত্ত সকল দ্রাঘিমা রেখায় লম্ব হিসাবে আপতিত হয়
কর্কটক্রান্তি
মকরক্রান্তি
বিষুবরেখা
মূল মধ্যরেখা
কর্কটক্রান্তি
মকরক্রান্তি
বিষুবরেখা
মূল মধ্যরেখা
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (ইং International Date Line) পৃথিবীর পৃষ্ঠে অঙ্কিত একটি কাল্পনিক রেখা যা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং একটি পঞ্জিকা দিবস এবং পরের দিনটির মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে ১৮০ দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে, তবে কিছু অঞ্চল এবং দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি এটিকে বিচ্যুত করা হয়েছে।
বিশ্বকে প্রদক্ষিণ করা
পশ্চিম অভিমুখে ভ্রমণকারী ব্যক্তিদের অবশ্যই তাদের ঘড়িগুলি সেট করতে হবে:
প্রতি ১৫° দ্রাঘিমা পেরোনোর জন্য এক ঘন্টা কমাতে হবে এবং
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা পেরিয়ে গেলে ২৪ ঘন্টা এগোতে হবে।
যে কেউ পূর্ব দিকে ভ্রমণ করবে তাদের অবশ্যই তাদের ঘড়িগুলি সেট করতে হবে:
প্রতি ১৫° দ্রাঘিমার পেরোনোর জন্য এক ঘন্টা এগিয়ে যেতে হবে এবং
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা পেরিয়ে গেলে ২৪ ঘন্টা পিছিয়ে যেতে হবে।
এটি করতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় সময়গুলির সাথে তাদের সময় ভুল হবে।
আরব ভূগোলবিদ আবুলফিদা (১২৭৩-১৩৩১) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ভূপ্রদক্ষিণকারীদের পৃথিবীর কোনো এক স্থানে স্থানীয় তারিখ থেকে একদিন এগিয়ে যেতে হবে।[১] এই ঘটনাটি ১৫২২ সালে প্রথম সফল ভূপ্রদক্ষিণকারী ম্যাগেলান – এলকানোর অভিযানের (১৫১৯-১৫২২) শেষে নিশ্চিত করা গিয়েছিল। স্পেন থেকে বিশ্বের পশ্চিম দিকে যাত্রা করার পরে, অভিযানের পথে কেপ ভার্দেতে থামা হলে সেদিন জাহাজের সময় অনুযায়ী বুধবার, ৯ জুলাই ১৫২২ খ্রিস্টাব্দ ছিল। তবে স্থানীয়রা তাদের জানিয়েছিল যে এটি আসলে ১০ জুলাই ১৫২২ বৃহস্পতিবার ছিল। ক্রুরা বিস্মিত হয়েছিল, কারণ তারা ভ্রমণের তিন বছরের কোনো দিন বাদ দেননি।[২] স্পেনের Venetian রাষ্ট্রদূত কার্ডিনাল গ্যাস্পারো কনটারিনিই প্রথম ইউরোপীয় যিনি এই সমস্যার সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।[৩]
বর্ণনা
এই বিবরণটি আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার সবচেয়ে সাধারণ বোঝার উপর ভিত্তি করে। দেখুন § De facto and de jure date lines এবং উপরে ডানদিকে মানচিত্র।
আইডিএলটি মূলত 180 ° দ্রাঘিমারেখা জুড়ে বিস্তৃত, প্রায় প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে এবং গ্রিনিচ দ্রাঘিমারেখা (মূলমধ্যরেখা) থেকে বিশ্বের অর্ধেক পথে অবস্থিত। অনেক জায়গায়, IDL 180 ° দ্রাঘিমারেখাকে সঠিকভাবে অনুসরণ করে। যদিও অন্যান্য জায়গায় আইডিএল সেই দ্রাঘিমারেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে বিচ্যুত হয়। এই বিচ্যুতিগুলি সাধারণত প্রভাবিত অঞ্চলগুলির রাজনৈতিক এবং/অথবা অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে করা হয়।
উত্তর থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হতে থাকলে, 180° রেখা থেকে আইডিএলের প্রথম বিচ্যুতি ঘটিয়ে একে ভ্রাঙ্গেলিয়া দ্বীপ এবং চুকচি উপদ্বীপ (রাশিয়ান সাইবেরিয়ার পূর্বতম অঞ্চল) এর পূর্ব দিকে সরানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভ্রাঙ্গেলিয়া দ্বীপটি সরাসরি দ্রাঘিমাটির উপরে অবস্থিত। স্থানাঙ্ক: 71°32′N 180°0′E কিংবা 71°32′N 180°0′W।[৪] এটি এরপরে ডায়োমীড দ্বীপপুঞ্জদ্বয়ের মধ্যবর্তী বেরিং প্রণালীর ওপর দিয়ে প্রসারিত হয়েছে। প্রতিটি দ্বীপের থেকে আইডিএল ১.৫ কিলোমিটার (০.৯৩ মা) দূরত্বে 168°58′37″ W দ্রাঘিমা বরাবর প্রসারিত হয়েছে। এটি পরে 180° দ্রাঘিমার থেকে অনেকটা পশ্চিমে বেঁকে সেন্ট লরেন্স দ্বীপ এবং সেন্ট ম্যাথু দ্বীপের পশ্চিম বরাবর অগ্রসর হয়েছে।
আইডিএল এরপর মার্কিন অ্যালিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ( অ্যাটু দ্বীপটি সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত) এবং রাশিয়ান কমান্ডার দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এরপরে এটি পুনরায় দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বেঁকে 180° দ্রাঘিমায় ফিরে এসেছে। সুতরাং, সমস্ত রাশিয়া আইডিএলের পশ্চিমে এবং সমগ্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র (গুয়াম, উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ এবং ওয়েক দ্বীপপুঞ্জের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলি ব্যতীত) আইডিএলের পূর্বে অবস্থিত।
প্রতিপাদ স্থান
কোন স্থানের ঠিক বিপরীত স্থানকে ঐ স্থানের প্রতিপাদস্থান বলে। অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট স্থান হতে পৃথিবীর কেন্দ্র ভেদ করে যদি কোন সরলরেখা টানা হয় তা পৃথিবীর অপর যে প্রান্তে ভেদ করবে তাকে ১ম স্থানের প্রতিপাদস্থান বলা হবে।
মানচিত্রে পৃথিবীর ভূস্থলের প্রতিটি বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান দেখানো হয়েছে। নীল রঙের স্থানের প্রতিপাদ স্থান গোলাপী রঙে নির্দেশ করা হয়েছে -বেশির ভাগ স্থানের প্রতিপাদস্থান মহাসাগরে অবস্থিত।
যেমন,বাংলাদেশের প্রতিপাদস্থান হচ্ছে চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র ভেদ করে সরলরেখা বরাবর যদি কোন গর্ত খুড়ে যাওয়া যায় তবে চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে বের হবো(যদিও এটি সম্ভব নয়)